Posts

Showing posts from June, 2018

আড়াই ঘন্টার রাস্তা

কোরবানি ঈদের আর ৫ কি ৬ দিন আছে। বাড়িতে যাচ্ছি। সকাল ৮টা, মহাখালী থেকে বাসে উঠবো। শুনেছি ভাড়া গতকাল থেকেই একটু বেশি চাইছে। বাসে উঠলাম । এমনিতে ভালুকা যেতে ২-২ঃ৩০ঘন্টা সময় লাগে। বাসে উঠে দেখি আর মাত্র কয়েকটা সিট খালি আছে। একটু পেছন দিকে এসে দেখি মহাত্মা গান্ধীর চশমার মত গোল চশমা পড়া একটা মেয়ে জানালার পাশের সিটে বসে আছে। সৌন্দর্য সেটা চোখ ধাঁধানো। প্রথম যখন ঢাকায় আসি তখন থেকে বাসে যতবার চড়েছি, ভেবেছি, ইস একবার যদি একজন সুন্দরী আমার পাশে বসতো। তাহলে যেকোন ভাবেই হোক তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাবো। তবে ভার্সিতে উঠে আমার এই ভ্রম কেটেছে। জিজ্ঞেস করলাম, পাশের সিটে কেঊ আছে কিনা? -জ্বী? -আপনার পাশে কেঊ আছে? সিট থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটা নিজের হাতের ওপর নিয়ে শুধু একটু শব্দ বলল, "না"। আমি বড় ব্যাগটা পায়ের কাছে রেখে বসলাম সিটে। এখন মনে হল, একটা পানির বোতল আনা দরকার। মেয়েটিকে কি বলে যাবো, পাশের সিটটি দেখে রাখার জন্য? ছেলে হলে ঠিকই বলে যেতাম। কিন্তু মেয়ে তো, পাছে এটা না ভাবে লাইন মারছি। এত ভেবে-টেবে লাভ নেই দোকান কাছেই, ব্যাগ রেখেই যাই। পানি আর একটা চিপস নিয়ে ফিরে এলাম। গাড়ি এখনই ছে...

একটি বাসের গল্প

বাসটি কুড়িল ফ্লাইওভারে উঠলো । বোঝা যাচ্ছে ড্রাইভার ভালো মুডে আছে তাই ফ্লাইওভারে উঠে মনের সুখে গাড়ি চালাচ্ছেন । পেছনে একটা ছোট পিকাপ এসে হর্ন দেয়াতে ড্রাইভার বাসটি বাম পাশে সরিয়ে পিকাপটিকে সাইড দিলো । পিকাপটির ড্রাইভার মোটেও ভালো মুডে নেই তাই ডান দিক থেকে যাওয়ার সময় সে হালকা বামে সরে গেল ফলে বাসের ড্রাইভার ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাসটি দুইতলা সমান উঁচু ফ্লাইওভার থেকে নিচে পরে যাচ্ছে । নিচে একটা প্রাইভেট কার । গাড়িটি সরে গেল বাসটি পরতে পরতে ।  আমার মাথায় ধাম করে একটা শব্দ হলো এবং মনে হলো আমার শরীর একবার শূন্যে ভাসছে আরেকবার আছরে পরছে । আমার হাতে রিং চিপস এর একটা প্যাকেট ছিল । ফ্লাইওভারে ওঠার আগেই কিনেছিলাম । পানির বোতল টা দেখতে পাচ্ছিনা ।  মাথার বাম পাশে ভেজা ভেজা লাগছে । গায়ের হলুদ শাড়িটাও লাল হয়ে আছে । আজ ই প্রথম পরেছিলাম শাড়িটা । কারন আজ একটি বিশেষ দিন ছিল ।  কিছুদুরে আমার মতনই অন্য একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে । বাঁচার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে ।  বাসে ওঠার সময় দেখেছিলাম একজন ওকে হাত ধরে বাসে উঠিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল "আজ তোমার সাথে না যেতে পারার জন্য সরি,...

তিথীর গল্প (১)

লেখিকাঃ কাজী মিহিকা তিথী দোতালার জানালা দিয়ে বাড়ির পাশের খালি জায়গাটার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে তারা যখন প্রথম এই এলাকায় এসেছিল তখন কতটাই না অন্যরকম ছিল জায়গাটা। বাড়ির সামনে কোন পাকা রাস্তা ছিলনা। চারিদিকে শুধু পানি। আর উপরে ছিল বাশ দিয়ে বানানো সাঁকো। সাঁকোর উপর দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেত তিথী। এই সাঁকো পাড় হতে গিয়ে কতবার পড়ে স্কুল ড্রেস নষ্ট করে ফেলেছে। স্কুলের সামনের রোডটা বালি ভর্তি। পানি পাড় হয়ে বালিতে পা রেখতেই চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল, আম্মুর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে স্কুলে ঢুকি। আমাদের বাসার থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা জায়গা বালি আর ইট দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে, বিল্ডিং ভানানোর জন্য। সত্যিই একদিন দেখি বিশাল বিশাল মেশিন আনা হয়েছে। বিশাল গর্জনে, দানবীয় আওয়াজ তুলে চলছে মেশিনগুলো। আমি ভাবতে লাগলাম,  একদিন তাহলে পালটে যাবে এলাকাটা, বিশাল বড় বড় বিল্ডিং উঠবে, পিচঢালা রাস্তা হবে। সাঁকো দিয়ে আর ডোবা পেরোতে হবে না। এই খুশিতে কল্পনার বিস্তৃতি আরো একটু বেড়ে গেলো, আর কচু পাতায় ব্যাঙের লাফানো দেখতে দেখতে আমার দিন কেটে যায়। প্রায় রাতে তাকিয়ে থাকি, সেই বড় বিল্ডিংটার দিকে। শুনেছি, বিল্ডিংটা দশতলা ...

তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা (২)

টিপ টিপ করে চোখের পাতা খুলল অনুপ। অনেক সকাল হয়ে গেছে, ঘড়ি দেখার দরকার নেই, বাহিরের সূর্য স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। উঠে বসল সে। বারান্দার কাছে যেতেই, একটা মেয়ে চুল শুকাচ্ছে। না ভুলে যায়নি সে, গতকাল থেকে দোলা আর সে একই বাসায় থাকছে। তবে এটা একটা অন্যরকম অনুভুতি, ভেজা চুলে দোলা মনে ভীষণ দোলা দিয়ে গেল। একটু পেছনে তাকিয়ে দোলা বলল, ঘুম ভেঙে গেছে? অনুপ- শেষ বিকেলে অস্ত যাওয়া লাল সূর্যটাকে তোমার কপালে আর আমাবস্যার তিমির থেকে তুলে আনা ভারী অন্ধকারকে তোমার চোখে তুলে দিলে যে রূপ তুমি ধারণ করবে, তাতে নিজেকে হারিয়ে খুজতে আর ভয় নেই আমার। -পাগল একটা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমার ক্লাস আছে। আমি বেরিয়ে পড়ব। মুখটা বাঙলা পাঁচের মত করে অনুপ বলল, এত প্রশংসা করলাম তার এই জবাব? -হাহাহা, Thank you. হয়েছে? এখন এত সময় নেই তোমার সাথে প্রেম করার, যাও। অনুপ বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে দোলা ব্যাগ নিয়ে রেডি, বেরিয়ে পড়বে। -যাচ্ছো? -হ্যাঁ। সকালে ভাত, ডিম আর ডাল। ক্লাসে যাবার আগে খেয়ে নিও। চলি, দরজা লাগিয়ে নাও। -সাবধানে যেও। -হুম। অনুপের ইউনিভার্সিটি থেকে বাসা খুব একটা দূরে না। তবে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। আগামীকাল প্রজে...

তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা (১)

সকাল ৬টা, গুলির আওয়াজের শুনে ঘুম ভাঙল অনুপের। কোন হার্টের রুগী হলে তার পটল তোলা হয়ে যাবে, কিন্তু এমন রিং-টোন কেন, সেটা অনুপ ছাড়া কেউ বুঝবে বলে সে আশা করে না। তাই কারনটা খোলাসাও করে না। -হ্যালো।  -কোথায় তুমি?  -কোথায় আবার বাসায়। -এখনো ঘুমাচ্ছো? আজ আমাদের নতুন বাসায় ওঠার কথা না? আচমকা তার মনে হল, নতুন বাসায় ওঠার কথা আজ। লাফিয়ে উঠল সে।  -তুমি কোথায়?  - কোথায় আবার, তোমার বাসার নিচে। আমার জিনিসগুলো কি আমিই নেবো?(কথায় একটা রাগান্বিত ভাব আছে দোলার কন্ঠে।)  দোলা, অনার্স( সিএসসি)  ২বর্ষ। অনুপের গার্লফ্রেন্ড এবং হবুবউ। -আচ্ছা, ৫মিনিট আমি আসছি।  (পরে বুঝতে পারল ৫মিনিট খুব কম সময়, অবশ্য এর থেকে বেশি বললেও সমস্যা আছে) অনুপের জিনিসপত্র গুছানোই ছিল, শুধু ফ্রেশ হবার সময়টুকু। তবুও ৫মিনিট খুবই কম সময়।  এই নিয়ে ৩বছরে ৭বার বাসা পাল্টাচ্ছে সে। সংখ্যার হিসেবে কম হলেও, এবারের পালটানোটা অন্য সববারের চেয়ে আলাদা। কিভাবে? সেটা সময় এগোলেই বুঝতে পারা যাবে।  ভ্যানে তোলা হলো জিনিসপত্র, ব্যাচলরদের খুব একটা জিনিস থাকে না, বিশেষ করে ছেলেদের। মেয়েদের ...