আড়াই ঘন্টার রাস্তা


কোরবানি ঈদের আর ৫ কি ৬ দিন আছে। বাড়িতে যাচ্ছি।
সকাল ৮টা, মহাখালী থেকে বাসে উঠবো। শুনেছি ভাড়া গতকাল থেকেই একটু বেশি চাইছে। বাসে উঠলাম । এমনিতে ভালুকা যেতে ২-২ঃ৩০ঘন্টা সময় লাগে।

বাসে উঠে দেখি আর মাত্র কয়েকটা সিট খালি আছে। একটু পেছন দিকে এসে দেখি মহাত্মা গান্ধীর চশমার মত গোল চশমা পড়া একটা মেয়ে জানালার পাশের সিটে বসে আছে। সৌন্দর্য সেটা চোখ ধাঁধানো। প্রথম যখন ঢাকায় আসি তখন থেকে বাসে যতবার চড়েছি, ভেবেছি, ইস একবার যদি একজন সুন্দরী আমার পাশে বসতো। তাহলে যেকোন ভাবেই হোক তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাবো। তবে ভার্সিতে উঠে আমার এই ভ্রম কেটেছে।

জিজ্ঞেস করলাম, পাশের সিটে কেঊ আছে কিনা?
-জ্বী?
-আপনার পাশে কেঊ আছে?
সিট থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটা নিজের হাতের ওপর নিয়ে শুধু একটু শব্দ বলল, "না"।
আমি বড় ব্যাগটা পায়ের কাছে রেখে বসলাম সিটে।
এখন মনে হল, একটা পানির বোতল আনা দরকার। মেয়েটিকে কি বলে যাবো, পাশের সিটটি দেখে রাখার জন্য? ছেলে হলে ঠিকই বলে যেতাম। কিন্তু মেয়ে তো, পাছে এটা না ভাবে লাইন মারছি। এত ভেবে-টেবে লাভ নেই দোকান কাছেই, ব্যাগ রেখেই যাই।

পানি আর একটা চিপস নিয়ে ফিরে এলাম। গাড়ি এখনই ছেড়ে দেবে। সিটে এসে বসলাম। পেছনের সারি এখনো ভরেনি। মনে হয় রাস্তা থেকে তুলবে।

মহাখালী ফ্লাইওভারের পাড় করে এলাম। মেয়েটির কোন সাড়া নেই, নিষ্প্রভ ভাবে বাহিরে চেয়ে আছে। মন চায় কথা বলতে তবে হেংলামী করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। থাক যেমন আছে থাক।
আমিও হেডফোন কানে দিয়ে বসে আছি। গান শুনতে শুনতে চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। হঠাৎ একটা রিংটোন শুনে চোখ খুলে গেলো। মেয়েটার মোবাইল।

মেয়েটি কল তুলল। ওপাশ থেকে কি বলছে শুনতে পারছি না । তবে না শোনার ভান করেও মেয়েটির উত্তর কি শুনতে চেষ্টা করছি।

-দেখো রাফি, আমি তোমার কোন কথাই শুনতে চাইছি না।
 ফোনের ওপাশে কি বলছে সেটা সেকেন্ড কয়েক শুনল, তারপর বলল, তুমি যত কিছুই বলো, এই কাজের কোন এক্সপ্লেনেশন আমি মেনে নিব না। তুমি আর কখনো কল করবে না, নইলে আমি পুলিশে যেতে বাধ্য হব।
হয়ত বয়ফ্রেন্ডের সাথে গুরুত্বর ঝামেলা বেঁধেছে । মেয়েটি মনে হয় কাঁদছে । গাঢ় কাজল মেশানো অশ্রু কপলের একটা ব্রণের ওপর এসে থামল। আমি পকেটে থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলাম।
এইরে ভুল করে ফেললাম মনে হয়।
আমার দিকে তাকালো। নাহ, আমার চেহারায় মনে হয় ইনোসেন্ট একটা ভাব আছে। টিস্যুটা নিল।
আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করাটা বাড়াবাড়ি হতে পারে।

আব্দুল্লাহপুর থেকে ৪জন মানুষ উঠল।
মেয়েটা এখনো কাঁদছে। কিছু বলা দরকার।
-মাফ করবেন। আপনাকে চিনি না, আর এটা সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চা। তবুও, আপনি কাঁদছেন কেন?
-এমনি, আপনি আপনার কাজ করুন।
গলার তিক্ততায় একটু অপমান বোধ করলাম। তাই আর কোন কথা বললাম না।

-ভাই ভাড়া দেন, আপা ভাড়া দেন। কন্টাক্টার এসে বলল।
200৳ বের করে দিলাম। মেয়েটিও দিল। টাকা দেয়ার সময় মেয়েটি মনে হয় আমার দিকে তাকালো। হয়ত ভাবছে, লোকটাকে অপমান করা ঠিক হয় নি।

টঙ্গি থেকে একটু জ্যাম হয়, এটা মনে হয় সারাজীবনই দেখতে হবে। হঠাৎ একটা সুমধুর কন্ঠ শুনতে পেলাম।
-কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
আমি ওনার দিকে তাকালাম, নাহ এখন আর কাঁদছে না।
-জ্বী, ভালুকা। আপনি?
-সাইনবোর্ড। ভালুকার পরে।
-হ্যাঁ, আমি চিনি।
-I'm sorry. তখন আপনার সাথে অমন ব্যবহারে জন্য।
-না, সমস্যা নেই।
-হুম, Thank you.
আবার চুপ হয়ে গেল। বুঝলাম, শুধু সরি বলার জন্যই একটু কথা বলেছে। কিন্তু আমার কথার রাস্তাটা খুলে গেল।
-কিছু মনে করবেন না, আপনি তখন কাঁদছিলেন কেন? যদি খুব পার্সোনাল না হয় তাহলে বলতে পারেন। আর এই বাস জার্নির পর আপনিও আমাকে মনে রাখবেন না আর আমিও আপনাকে। So, বলে মনটা শান্ত করে নিন।
-কিছু না। সামান্য বিষয়। My boyfriend cheated me, that's it.
-এতটাই সামান্য......
আমার কল এসেছে।
-Excuse me.
মায়ের কল। রিসিভ করলাম।
-হ্যালো মা।
-বাবা, কোথায় তুমি?
-আমি তো মা টঙ্গি। জ্যামে আটকে আছি।
-খবরে দেখলাম বলল, টঙ্গি থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা ১২কিমি বিশাল যানজট।
- হায়রে। কি বলো। আচ্ছা, তুমি টেনশন করো না মা।
-আচ্ছা, বাবা। তুমি সাবধানে আসো। কিছু খাইছো সকালে ?
-হ্যাঁ, খেয়েছি।
-আচ্ছা, আসো।
-ঠিক আছে। রাখছি মা।

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মুখে একটা কষ্টের ছাপ পড়েছে মনে হয়।
-কি হয়েছে?
-মা বললেন, রাস্তায় নাকি বিশাল জ্যাম। খবরে দেখাচ্ছে।
-ওহ।
-আপনার নামটা জানা হল না।
-আমার নাম, ঋদিতা। আপনার?
-সৌমিক।
-ভালো নাম। কি করেন?
-পড়ালেখা। সিএসই সেকেন্ড-ইয়ার ফোর্থ সেমিস্টার। আপনি?
-আমি বিবিএ করছি। থার্ড ইয়ার।

কেউ আমার মাথায় একটা বাঁশ দিয়ে বারি মারল মনে হয়। আমি ভাবলাম কোথায় বলবে, মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম। এতো দেখি আমার চেয়ে উপরে।
আমি একটা ভেবাচেকা মার্কা হাঁসি হেঁসে। অন্যদিকে চেয়ে রইলাম।
গাড়ি আধা ঘন্টা ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই দাঁড়িয়ে। প্রচুর গরম বাহিরে। মনটা কেমন খচখচ করছে। একটু কথা বলার জন্য। কি হয়েছে, আমার থেকে উপরের ক্লাসে পড়ে বলে। বয়সে তো আমার থেকে ছোটও হতে পারে। ধুর কি ভাবছি প্রেম করব নাকি, এত ভাবার কি আছে?
উল্টো-পাল্টা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মেয়েটি বলল, একটু পানি হবে? আমারটা শেষ হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ, কেন নয়।
পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম।
-এই ঈদের মাঝে বাড়ি যাওয়াটা অনেক কষ্টের। আমি বললাম।
-হ্যাঁ। কিন্তু বাবা-মাকে ছাড়াও তো ঈদের আনন্দ পাওয়া যায় না।
-আপনার বাড়িতে কে কে আছে?
-বাবা, মা, ছোট ভাই। আপনার?
-মা, বড় ভাই, ভাবী আর আপু ছিল; ওনার বিয়ে হয়ে গেছে। আপনি ঢাকায় কোথায় থাকেন?
-আমি বাড্ডায় থাকি।
-আমি ধানমন্ডি থাকি।
-আচ্ছা। কোন ভার্সিটি?
-ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। আপনার?
-ইষ্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।

মনে হয় কিছুটা মেঘ কেটেছে মন থেকে। চোখের লাল ভাবটাও আর নেই। চোখের চশমাটা খুলল। আমি হা করে চেয়েই রইলাম। চশমা ছাড়া কত কিউট লাগে। কেউ এমন একটা মেয়েকে কিভাবে কষ্ট দিতে পারে !
গাড়িটা একটু এগিয়েছে। আমাদের কথা চলছেই। কে বলবে এই মেয়েটা একটু আগেও কাঁদছিল। হয়ত আমাকে নিয়ে এখন আর কোন insecurity বোধ করছে না।
তারপর মোবাইলটা কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করলাম। না, কোন কল আসে নি। সকাল ১০ঃ৩০টা বাজে এতক্ষনে আমি বাসার কাছাকাছি পৌছে যেতাম।
আমাকে আমার বন্ধুরা বলে, কথার রেডিও; শুরু হলে আর থামার নাম নেই। আর এই জ্যামের মাঝে কথা বলে সময় পাড় করাটাই সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি।

-মেয়েদের প্রশংসা করলে ওনারা রাগ করেন কেন?
-কারণ ছেলেরা অনেক ভাল ইনটেনশন নিয়ে আসেন তো তাই, নিজেদের নিয়ে তাঁরা একটু শঙ্কিত থাকে। তবে আমাকে প্রশংসা করতে পারেন, রাগ করব না। (একটা মিষ্টি হাঁসি)
-চশমা ছাড়া অনেক সুন্দর লাগে আপনাকে।
-কই? অনেকে তো বলে আমি চশমা পড়লে ভালো লাগে।
-সৌন্দর্য বোঝার জন্য দেখার দৃষ্টি থাকা লাগে। এই মহাত্মা গান্ধীর চশমা পড়লে কাউকে সুন্দর       লাগবে!?
-আচ্ছা?
-হ্যাঁ। আমার বাসায় মনে হয় আয়না নেই।
-হাহা হাহাহা। আপনি কি পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করেন?
-গান করি। আপনি?
-বাহ, ভাল তো। না ক্রিয়েটিভ কিছু করি না। টিউশন করি।
-আপনার কাজটা বেশি ক্রিয়েটিভ।
আমাদের দেশে মেয়েরা অপরিচিতের সাথে কথা বলতে জানে না। হয়ত দোষটা ছেলেদেরই কারন আসলে কি নিয়ে কথা বলা উচিত তাই হয়ত আমরা জানি না। এই ঋদিতা মেয়েটা সেদিক থেকে আলাদা কথা বলতে পারে। শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা গেলে, কথা বলায় কোন বাধা আসে না।
 পেটের ভেতরে গুরুম গারুম শুরু হয়ে গেছে। চিপস খেয়ে কি আর ক্ষুধা মেটে। কি যে করি......
হঠাৎ সোহেলের কল আসলো।

-হ্যালো, বল।
-তুই কোথায়?
-বাসে, বাড়ি যাচ্ছি।
-ও । কখন বেরিয়েছিস?
-৭টায়।
-খেয়েছিস কিছু?
-নারে। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। এতক্ষনে বাড়ি পৌছে যেতাম। তাই কিছু খাইনি।
-আচ্ছা, কিছু খেয়ে নে। দেখ আসে পাশে।
-ঠিক আছে। তুই আসছিস কবে?
-আমি বাড়ি চলে এসেছি, গতকাল।
-ও আচ্ছা।
-ঠিক আছে। তাহলে দেখা হবে।

মেয়েটা আমার দিকে তাকালো, তারপর বলল, আপনার সাথে হয়ত এর পর আর দেখা হবে না। তাই বলতে কথা বলতে কোন সমস্যা নেই।
আমি একটু হাসলাম। বললাম, হুম। বলুন।
 -কোন সম্পর্কে যাবার আগে বোঝা যায় না বুঝলেন, সম্পর্কটা কতদুর এগোবে। আসলে এই সম্পর্ক কেন করছি। আদৌ এমন সম্পর্ক আমি চাই কিনা। এসবের খুব দরকার।
-আপনার মুখটা মলিন লাগছে।
একটা কৃত্তিম হাঁসি দিল।
আমি আবার বলা শুরু করলাম, অনেকে বলে ভালবাসা, প্রেম এগুলো ক্যালকুলেটরে হিসেব করে হয় না। হয়ে যায়। কিন্তু আমি মনে করি না। চিন্তা ভাবনা, বিচার-বিবেচনা আমাদের ভাল একটি সম্পর্কের দাড় করাতে সাহায্য করে। সেটা যেকোন সম্পর্কই হোক না কেন।
-আপনি তো অনেক ম্যাচিউর কথা বলেন। ভালবাসার আগে আপনার সাথে দেখা হওয়াটা জরুরী ছিল। তাহলে ভাল সাজেশন পাওয়া যেত।
-হাহাহা। তো ঈদে আপনার প্ল্যান কি?
-তেমন কিছু না। রান্না করব, খাবো দাবো। আর ঈদের পরদিন বন্ধুদের বাড়িতে ঘুরতে যাবো।
-অনেক ভালো রান্না করেন নাকি।
-তা জানি না।

অনেকক্ষণ ধরেই মোবাইলটা ভায়াব্রেট করছে, কিন্তু তুলছে না। হয়ত বয়ফ্রেন্ডটার, তাই তুলছে না। ব্যাগ খুলছে এবার তুলবে, না। ব্যাগ থেকে একটা বাটি বের করল। পায়েস রান্না করা। আমি অন্যদিকে চেয়ে রইলাম। মনে হয় এখন খাবে। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে, কিন্তু তাই বলে অন্যের খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক হবে না। আর ঈদের সময় অপরিচিতর কাছে থেকে কিছু খেলে পরে যদি মুশকিলে পড়ি।
আমার দিকে একটু এগিয়ে দিলেন। আমি তাকিয়ে বললাম, আমি খাব না। আপনি খান।
-ভয় পাচ্ছেন মনে হয়। আরে আমি চোর বা অজ্ঞান পার্টির কেউ না। খেতে পারেন। ক্ষুধা আমারও পেয়েছে তাই আমিও খাব।
এভাবে বিশ্বাস করা ঠিক না। কিন্তু আমি এমনটা ভাবছি বুঝল কিভাবে  !! একটু পরীক্ষা করে দেখি সে খায় কিনা।
-আচ্ছা, আপনি নিন আমি নিচ্ছি।

না, খেয়েছে, ওমন পাব্লিক না। তাহলে খাওয়া যায়। খেলাম একটু।

-বাহ, ভালো রান্না করেছেন তো।
-Thank you. অপরিচিত মানুষের কাছে থেকে Compliment পেতে ভালো লাগে। আরেকটু নিন।
-না না। আর না।
-আমি এতটা খাবো না। বললেন ভাল হয়েছে আর এখন নিচ্ছেন না। তাহলে নিশ্চয়ই ভালো হয়নি।
-না, মিথ্যে বলি নাই। খেতে ভালো হয়েছে, তবে কর্পূরের গন্ধ।
-আমার কর্পূরের গন্ধটা খুব ভালো লাগে।
-ও আচ্ছা।
সে খেতে থাকল। আমি আর নিলাম না। কর্পূরের গন্ধটা খুব খারাপ লাগে। চুপ করে আছি। মাঝে মধ্যে মেয়েটাকে দেখছি। উফ এত সুন্দর, চিবুকের ওপর একটা তিলও আছে। কেন যে আমার চেয়ে সিনিয়র হল। এই কষ্টেই আমার কান্না পাচ্ছে।

৫ঘন্টায় সালনা পার হতে পেরেছি। সালনা ব্রিজ পার করে এগোতেই। হঠাৎ গাড়িটা তেলের পাম্পের পাশে দাড় করালো। একজন জিজ্ঞাসা করল, কিরে ভাই এমনেই সকাল থেইক্কা ৫ঘন্টায় এই পর্যন্ত আসিছি, এখন গাড়ি থামাইছো কেললাইগগা?
কন্টাক্টার বলল, ওস্তাদের প্রাকৃতিক দূর্যোগ আইছে।
ভালই হল। আমিও নেমে, কাজটা সেরে আসি। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।

পেট্রল পাম্প থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে আসছি। দেখলাম, শরৎ এসে গেছে তবু একটা গাছে কয়েকটা কদমফুল ফুটে আছে। গাছটা ছোট আমি তাড়াতাড়ি ৩টা ফুল নিয়ে নিলাম। গাড়িতে উঠে দেখি মেয়েটা এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি ফুলগুলো আমার ব্যাগে রেখে দিলাম।

গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম, চশমা পড়েই ঘুমাচ্ছে, মাথাটা একটু বাকা হয়ে আছে । আমি ভাবলাম, চশমাটা খুলে পড়ে দেখব আমায় কেমন লাগে।
সোজা হয়ে বসল। ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
-চশমাটা পড়ে দেখবেন নাকি। তেমন পাওয়ার নেই, সমস্যা হবে না।
-না, আমি চশমা পড়তে যাব কেন?
-তাকিয়ে ছিলেন যে ভাবলাম আমার চশমাটা খুব পছন্দ হয়েছে।
-এই চশমাটাও রাফিরই কিনে দেয়া।
-তাহলে এটা ফেলে দিচ্ছেন না কেন?
-কারণ, রাগের বসে আমি এটা ফেলে দিলে দেখতে অসুবিধা হয়ে যাবে। বাড়িতে একটা আছে। বাড়িতে গিয়েই এটা ভেঙ্গে ফেলবো।
-না, ঠিক আছে। একদম বোকার মত কাজ করেন নি।

কথা বলতে বলতে সময় কেটে গেল আরো কিছুক্ষণ। আমি সিডস্টোর চলে এসেছি। পরের স্টপেজটাই ভালুকা। আমি নেমে যাবো। ব্যাগ থেকে কদমফুলটা বের করলাম। মেয়েটা বাহিরে তাকিয়ে আছে। আমি ডাকলাম,  ঋদিতা?
-জ্বী বলুন?
-আমি নেমে যাবো পরের স্টপেজে, আপনি যাবেন আরো কিছুটা।
-ও হ্যাঁ।
ফুলগুলো এগিয়ে দিলাম।
-সুন্দর একটা জার্নি ছিল।
-আমার জন্যও। আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি আজকে অনেক বাজে একটা সময় পার করতাম। কিন্তু আপনি অচেনা হয়েও আমার সাথে থেকেছেন।
-ফুলগুলো নেবেন না?
-কেন নেবো না? দিন। এই সময় কদম কোথায় পেলেন?
-ভাবলাম, আপনার ভালো লাগবে।
-ফুল তো শুকিয়ে যাবে। ফুলের সাথে সাথে তো আপনিও ভুলে যাবেন আমাকে। (কৃত্তিমতা মেশানো একটা চাপা কষ্টের হাঁসি হাসলাম।)
আর কিছু বললাম না। বাসস্ট্যান্ডের কাছে চলে গেছি এসেছি।
ঋদিতা- ভালো থাকবেন। আপনি আমার ফোন নম্বরটা রাখতে পারেন।
সৌমিক- নাহ, আপনিও ভালো থাকবেন।

হয়ত বন্ধু হিসেবেই বলেছিল, ফোন নম্বরটা নেয়ার জন্য।
ঋদিতা কিছুটা হলেও দাগ কেটেছে সৌমিকের মনে। কিন্তু সে জানে কিছু কিছু মায়াতে না জড়ানোই ভালো।




লেখক- মলয় বাড়ৈ বিরাট

Comments

Popular posts from this blog

তোমার জন্য একটি কবিতা, মায়াবতী

রূপ

জেলখানা ও ভালবাসার কথা