তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা (১)

সকাল ৬টা, গুলির আওয়াজের শুনে ঘুম ভাঙল অনুপের। কোন হার্টের রুগী হলে তার পটল তোলা হয়ে যাবে, কিন্তু এমন রিং-টোন কেন, সেটা অনুপ ছাড়া কেউ বুঝবে বলে সে আশা করে না। তাই কারনটা খোলাসাও করে না।
-হ্যালো। 
-কোথায় তুমি? 
-কোথায় আবার বাসায়।
-এখনো ঘুমাচ্ছো? আজ আমাদের নতুন বাসায় ওঠার কথা না?
আচমকা তার মনে হল, নতুন বাসায় ওঠার কথা আজ। লাফিয়ে উঠল সে। 
-তুমি কোথায়? 
- কোথায় আবার, তোমার বাসার নিচে। আমার জিনিসগুলো কি আমিই নেবো?(কথায় একটা রাগান্বিত ভাব আছে দোলার কন্ঠে।) 
দোলা, অনার্স(সিএসসি) ২বর্ষ। অনুপের গার্লফ্রেন্ড এবং হবুবউ।
-আচ্ছা, ৫মিনিট আমি আসছি। 
(পরে বুঝতে পারল ৫মিনিট খুব কম সময়, অবশ্য এর থেকে বেশি বললেও সমস্যা আছে)
অনুপের জিনিসপত্র গুছানোই ছিল, শুধু ফ্রেশ হবার সময়টুকু। তবুও ৫মিনিট খুবই কম সময়। 
এই নিয়ে ৩বছরে ৭বার বাসা পাল্টাচ্ছে সে। সংখ্যার হিসেবে কম হলেও, এবারের পালটানোটা অন্য সববারের চেয়ে আলাদা। কিভাবে? সেটা সময় এগোলেই বুঝতে পারা যাবে। 
ভ্যানে তোলা হলো জিনিসপত্র, ব্যাচলরদের খুব একটা জিনিস থাকে না, বিশেষ করে ছেলেদের। মেয়েদের বাসা পাল্টানো তো দুরের কথা, কোথাও ঘুরতে গেলেও এত ওজনের ব্যাগ থাকে, যেন সালমান খানকে দরকার হবে ব্যাগগুলো বইয়ে নেয়ার জন্য। 
অনুপ টানা ৩মাস ঘুরছিল একটা ব্যাচেলর বাসার জন্য। কিন্তু যে সব মেসে সে জায়গা পাচ্ছিল, সেগুলোতে না আছে কোন ভালো সুযোগ সুবিধা, তার ওপর খাবারের সমস্যা তো আছেই। আর ওই বাসাটাও ছাড়তে হবে।
দোলা, যে অনুপের সুখ-দুঃখের সাথী। সত্যি বলতে একটা সময়ের পর প্রতিটি মানুষের একটা সঙ্গীর দরকার হয়। যার সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায়। সে যে গার্লফ্রেন্ডই হতে হবে তা নয় । তবে অনুপের জন্য দোলাই ছিল সেই সঙ্গী।
দোলার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, যদিও এর ফলাফল কি হতে পারে তারা দুজনই খুব ভালভাবে আঁচ করতে পেরেছিল।
তারা বিয়ে করবে।
যদিও দোলা কিংবা অনুপ কারোরই তেমন ভালো কোন ইনকাম সোর্স নেই। তবু তারা নিজের খরচ নিজে চালানোর স্বক্ষমতা রাখে; দোলার টিউশন আর অনুপের ফ্রিল্যান্সিং । বাড়ি থেকে কোন টাকা আনতে হয় না তাদের। মোটামুটি স্বাবলম্বী তারা। 
প্রথম দফায় বিয়ের চিন্তা না থাকলেও পরে বুঝল বিয়েটাই ভালো উপায়।

খুব কষ্টে, জিনিসপত্রগুলো ওপরে তোলা হয়েছে। সব গুছিয়ে উঠতে দুপুর হয়ে এলো, সকালে কিছু খাওয়া হয় নি।
-দোলা, সকাল থেকে কিছু তো খাওয়া হয়নি। আর এখন রান্নাও করা সম্ভব না। ফ্রেশ হয়ে, চল বাহিরে যাই।
-আচ্ছা, আমরা বিয়ে করব কবে?
-রানা, আলিম ওরা শুক্রবার ছাড়া তো সময় করে উঠতে পারবে না।
-তার মানে আরো ৪দিন।
-হুম, তুমি সুস্মীতা আর সায়েমকে(দোলার বন্ধু) বলে রেখো।  
-আমরা সামান্য একটু সাজতেই পারি তাই না? লুকিয়ে হলেও জীবনের প্রথম বিয়ে বলে কথা।
-ও, আরো করার ইচ্ছে আছে তাহলে।
-মার খাবার সখ হয়েছে নাকি তোমার?
- হাহাহা। ঠিক আছে। সমস্যা নেই, শাড়ি আর সামান্য কিছু জুয়েলারী, চলবে ?
-হুম।
-আচ্ছা, আজ আসার সময় কিছু নিয়ে আসা যাবে।এখন যাও গোসল সেরে নাও।

রেষ্টুরেন্ট ঠিক বলা যায় না, একরকম ধাবা বলা চলে। বিরিয়ানির অর্ডার করা হল; দোলার পছন্দের খাবারের তালিকার শীর্ষে আছে এটা। অনুপের এসবে কিছু আসে যায় না।
-বিরিয়ানিটা তেমন ভালো না। -দোলা বলল।
-হ্যাঁ। তবে ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট। -অনুপ
- হাহাহাহাহা। আমার শাড়ি আর তোমার শেরওয়ানিটা আগে কিনবো। তারপর যদি টাকা থাকে তাহলে অন্য কিছু। 
-আমার হাতে ২০ আছে। আর যদি লাগে একাউন্ট থেকে কিছু তুলে নিবো। 
- না, সবটা খরচ করা যাবে না। খুব সিম্পল কিনবো। সব টাকা খরচ করা যাবে না। 
-আচ্ছা ঠিক আছে। 
-হকার্স মার্কেট থেকেই শাড়ি কেনা যাবে। আর একটু সস্তায় ভালটাই পাবো। 
-শেরওয়ানি কোথায় পাবো?
-নিউ মার্কেটে পাবে। আমরা ইস্টার্ন মল্লিকা থেকে কিনব। খাবার সময় বেশি কথা বলে না। এখন চুপ। 

রিক্সা নিয়ে সোজা চলে গেল, ঢাকা কলেজের সামনে হকার্স মার্কেটে। অনুপ জানে, মেয়েরা কতটা সময় নেয় সপিং করতে। একবার ছোট মাসির বিয়েতে সপিং করতে গিয়ে ৯ঘন্টা ব্যাগ টানতে হয়েছিল। এগুলো এখনো স্বপ্নে উঁকি দেয়। তবে দোলার সাথে কখনই এমন কষ্ট তাকে করতে হয়নি। 
শাড়ির সাথে অন্যান্যগুলো যেন ম্যাচিং হয় তাই ১ঘন্টা লাগল শুধু শাড়ি বাছাই করতে। তবু বাঁচা গেল, শুধু ১ঘন্টাই লেগেছে। পরবর্তী উদ্দেশ্য ইস্টার্ন মল্লিকা। 

৭টা বাজে, এবার সিঁড়িতেই যেন বসে পড়বে অনুপ। 
রুমে এসেই শরীর ছেড়ে দিল। ফ্রেশ হবার ইচ্ছাও নেই যেন। দোলা, ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলো। 
-তুমি কি রাতে আর কিছু খাবে? -অনুপ বলল
-হুম, একটা নুডুলস করব। তোমারটা তুমি করে নাও। 
-নাহ। আমি আর খাব না। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুমাবো। 
- হুহ, যাও, ফ্রেশ হয়ে নাও। আমিই করে দিচ্ছি। তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে যেও। 
একটা হাঁসি দিয়ে চলে গেল অনুপ। 
নুডুলস সাথে, হিন্দি সিরিয়ালের ধারুম ধুরুম শব্দ। ভালো একটা নুডুলসের সাথে এমনটা মেনে নেয়া যায়। 
-দোলা,তোমার কি এক বিছানায় ঘুমাতে প্রবলেম আছে? 
প্রশ্নটা শুনেই দোলার মুখ কেমন একটা হয়ে গেল। হ্যাঁ বা না, কোন উত্তরই যেন তার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। 
বুঝতে পারল অনুপ। 
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি পাশের রুমে বিছানা করে নিবো। 
-না না, তোমার খাট তুমিই থাক। আমি ওই রুমে চলে যাচ্ছি।
-তোমার আমার বলে কিছু নেই। তুমি এখানেই থাকবে, আমি ওপাশে যাচ্ছি। 
বেড নিয়ে চলে যাবার সময়, দোলা একটু ডাকল, অনুপ?  
-হুম, বলো ।
মাথা নিচু করে আসতে করে বলল, Thanks । যেন লজ্জায় চোখে চোখ রাখছে না। 
অনুপের মনে হল, সে দোলার সামনে না, অচেনা একজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 

২য় পর্ব আসছে...........

Comments

Popular posts from this blog

তোমার জন্য একটি কবিতা, মায়াবতী

রূপ

জেলখানা ও ভালবাসার কথা