খুনি
[বিঃদ্রঃ- লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
ব্যক্তি, স্থান, কাল, ঘটনা সবকিছুই লেখকের কল্পনার। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।
তাই, যদি বাস্তবের সাথে সাংঘষিক কিছু হয়ে থাকে তাহলে সেটা শুধুই কাকতালীয়]
করমর্দন করল দুজন। একদমই অপরিচিত দুজন। আগে কখনই কেউ
কাউকে দেখেন নি। কলকাতার শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠল। এই ট্রেন সরাসরি
বাংলাদেশে ঢুকবে। দেশী মানুষ জেনেই কথা বলতে এগিয়ে এলো।
রেদুয়ান হোসেন কাজল, পেশায় লেখক। কলকাতায় এসেছিলেন
২সপ্তাহ আগে, বিশ্ব বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি নিমন্ত্রণেই আসা। আজ ফিরে যাচ্ছেন
দেশে।
সুবোধ, পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। কলকাতায় এসেছিলেন
ঘুরতে কিন্তু পেছনে লুকানো আছে অন্য গল্প।
-আমার নাম কাজল। আপনার?
-আমি সুবোধ।
-কোলকাতায় কোন কাজে এসেছিলেন?
-না, ঘুরতে। আপনি?
-বিশ্ব বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে একটা আলোচনা অনুষ্ঠানে
অতিথি ছিলাম।
-আপনার পেশা?
-সামান্য লেখালিখি করি আর কি।
-বই পড়ার শখ থাকলেও, আপনাকে চিনি না। কি লেখেন?
-কখনো প্রেম কাহিনী কখনো রহস্য। আর না চেনাটাই
স্বাভাবিক, আমি তো হুমায়ুন আহমেদ নই।
-আক্ষেপ করলেন ?
-না, বাস্তবতা বললাম।
-হুম।
ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭:৩০টায়। ট্রেন থেকে নেমে দাড়ালো লেখক।
একটা সিগারেট ধরালো।
পাশে এসে দাড়ালো সুবোধ, জিজ্ঞেস করল, সিগারেট খাচ্ছেন?
-নিউ মার্কেট থেকে কিনেছিলাম, সিগারেটের নামটা দেখে ভাল
লেগেছিল তাই কিনেছিলাম।
-কি নাম?
-Parliament
-তো এতে ভাল লাগার কি আছে?
-ভাবুন তো, সংসদ পুড়িয়ে খাচ্ছি। সংসদ হচ্ছে চোরেদের আড্ডাখানা।
বাস্তবে আপনি না বলতে পারবেন, না সংসদ পুড়িয়ে খেতে পারবেন, তবে মনের শান্তিতে
পার্লামেন্ট সিগারেট পুড়িয়ে ধোয়া উড়াচ্ছেন।
-লেখক হিসেবে মানাচ্ছে না আপনাকে।
-মানে ঠিক বুঝলাম না?
-কিছু না। আমি ভেতরে যাই, এই সিগারেটের গন্ধে আমার আবার
বমি পেয়ে যায়।
-কথাটা লেখকের গায়ে লেগে গেল, সামনে এগিয়ে সিগারেটটি
ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসলো।
ট্রেনটি অনেক দ্রুত চলে।
-আপনি তো বললেন আপনি ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু আপনি তেমন
ভারী কিছু আনেন নিই।
-হ্যাঁ, আমি অনেক বেশি কিছু বহন করতে অভ্যস্ত না।
-ও আচ্ছা। কোথায় ঘুরলেন?
-স্টেডিয়ামে বসে ভারত অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দেখলাম।
-আপনি বিরক্ত হচ্ছেন। তবে আমার হাতে যে পরে সে সহজে
বেরিয়ে যেতে পারে না।
-না না, বিরক্ত হব কেন?
-কারন আপনি মিথ্যে বলছেন, ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওডিআই সিরিজ
মেলবোর্নে হচ্ছে, ইডেন গার্ডেনে না।
(ভয়ংকরভাবে তাকালো সুবোধ, চোখগুলো রক্তজবার মত হয়ে গেছে)
খড়গপুর স্টেশন পার করল ট্রেন।
কারোর মুখে আর কোন কথা নেই। খুব মৃদু একটা জিক জিক শব্দ।
এছাড়া কেবিনে আর কোন শব্দ নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন, তবে শরীর গরম হয়ে উঠেছে
দুজনের। নিঃশ্বাসের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
এভাবে পার হল ৩০মিনিটের মত।
হঠাৎ করেই সুবোধ বলে বসল, আমি ফুরতি করতে কোলকাতায় আসি
নি।
-তাহলে?
-লুকাতে এসেছিলাম।
-লুকাতে! কেন, এমন কার কাছে থেকে লুকোতে চাইছেন?
-পুলিশের কাছে থেকে। গত ২২শে সেপ্টেম্বর এর কথা মনে আছে
আপনার?
-হ্যাঁ।
-সেদিন কাজী বিরিয়ানী হাউসে হামলা হয়েছিল, ৭জন মারা
গেছে। সেই হামলাকারী আমিই।
-ধুর, আপনি মজা করছেন। ওটা তো জঙ্গী হামলা ছিল। ৩জন
জঙ্গী অংশ নিয়েছিল।
-পত্রিকা পড়ে বলছেন তো? আমার কথা শুনুন, আপনি জানেন কে
কে মারা গেছে ওই হামলায়। মন চাইলেই সরকার যেকোন হামলাকে জঙ্গী হামলা বলে দিতে
পারে। আর পত্রিকাগুলোও পারে, হাহ, নতুন একটা কিছু পেলেই নিজেদের মনের শত রঙ রস
মিশিয়ে গল্প বানাতে।
-তাহলে আপনি বলুন কি হয়েছিল সেদিন।
-আমি আসলে মারতে গিয়েছিলাম, দুইজনকে। আমার কোন দরকার ছিল
না, এতগুলো মানুষ মারার। তবে ঘটনা ধামা চাপা দিতেই ওগুলো করেছি।
-আপনি কি প্রোফেশনার কিলার?
-না, আমি ইঞ্জিনিয়ার। এমসিসি-তে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে আছি।
-তাহলে মেশিন ছেড়ে মানুষ মারবার দরকার পড়ল কেন?
-আমি আমার দুনিয়া নিয়ে ভালোই ছিলাম। আমি, আমার স্ত্রী আর
ছোট বোন। কিন্তু পারি নাই বেশি দিন ভাল থাকতে। একদিন সকালে আমি অফিসের জন্য
বেরিয়েছি। অফিস বেশি দূরে না। জ্যামটাই যা নইলে গাড়ি নিয়ে ২০-২৫ মিনিটে পৌছে যাই।
অফিসে পৌছানোর ১ঘন্টার মধ্যে সুমনা(আমার স্ত্রী) আমাকে ফোন করল। তার ভয়ার্ত কষ্ট
আমাকে অস্থির করে দিল। আমি ভোঁ দৌড়। বাসায় পৌছালাম। মাটিতে লুটিয়ে আছে ৩টা বডি,
মরা নাকি বেঁচে আছে বোঝার উপায় নেই। শুধু চোখের সামনে সাদা টাইলস এ রক্তের বন্যা।
কাঁদবো? না, তখন কাদতে পারছিলাম না। সময় নেই।
এ্যাম্বুলেন্স ডাকলাম। হাসপাতালে নিলাম। ২টা বডি আমি চিনি আরেকটা অচেনা। ডাক্তার
বলল, ২জন মারা গেছে একজন আইসিইউ তে ভর্তি। এখন কাঁদতে পারছিলাম না। আমার ছোটবোন,
শ্রাবন, আর বেঁচে নাই। আর সুমনা আইসিইউ তে ভর্তি। অচেনা লোকটা
কে? আমার জানা দরকার ছিল। পুলিশের ২বছর লাগল এটা খুজে বের করতে, অচেনা লোকটা আমার
স্ত্রীর পুরনো প্রেমিক আর পরিকল্পনার মূল হোতা ছিল। আর এর মাঝে আমার স্ত্রী কোমায়
চলে গেছে।
একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে, লেখক বলল, কিন্তু এর সাথে আপনার
বিরিয়ানী হাউসে হামলা চালানোর সম্পর্ক কোথায়?
সুবোধঃ আমার কেস ডিসমিসড হয়ে যায় এই কারনে যে, পুলিশ
বলেছিল, আবির, সুমনা আর শ্রাবনকে মেরে নিজে আত্মহত্যা করে। তবে এটা সত্য ছিল না।
কারন আমাকে সুমনা যখন ফোন করে তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম ঘরে একটা গ্যাং ঢুকেছে,
নইলে ও এত ভয় পেত না। ওর এক্স এসেছে তো এতে ভয় পাবার কি আছে?
কিন্তু পুলিশকে আর বোঝানো সম্ভব হল না। আর বিচার বিভাগের
আঠারো মাসে বছর কাটানোর অভ্যাসের কারনে বিচার পাবো এই বিশ্বাস উঠে গেল। ঠিক করলাম
শাস্তিটা আমিই দেবো।
লেখকঃ বিচার বিভাগের ওপর আস্থা নেই বলে বিচার আপনি করবেন
তা তো হয় না।
সুবোধঃ জ্ঞান দেবেন না। আপনজন কেউ খুন হলে তখন ভেবে
দেখবেন।
লেখকঃ ওহ মাফ করবেন। you continue.
-ওই হোটেলেই বসে ছিল ২ কালপ্রিট। আমি
একটা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বিরিয়ানি হাউসের সামান্য সামনে দাঁড়াই। ২২তারিখ
শুক্রবার ছিল, আমি নামাজের পর একটা ককটেল ফাটিয়ে দেই, যাতে বাহিরে অপেক্ষমান
কাস্টমাররা দৌড়ে পালিয়ে যায় আর ভেতরেরগুলো ভেতরেই বসে থাকে। আমি এ্যাম্বুলেন্স
থেকে নেমেই প্রথমে গুলি করি ফুড ডিস্টিবিউটারের হাতে। তারপর সো করে ঢুকে যাই
হোটেলের ভেতরে আসেপাশে থেকে কয়েকজন ছুটতে থাকে বলে আমার সমস্যা হয়ে যায়
কাল্প্রিটটাকে গুলি করতে, তাই এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ি। পরে একটু সাফ হয়ে গেলে ওই
দুটাকে শেষ করে, বেরিয়ে এয়াম্বুলেন্স এ করে টেনে পালিয়ে যাই। পালিয়ে বসিলার দিকে
আসি। আসলে ওটা এ্যাম্বুলেন্স ছিল না। শুধু রঙ দিয়ে লেখা ছিল এ্যাম্বুলেন্স আর
নাম্বার প্লেটও ছিল ভুল। আসল নাম্বার প্লেট লাগিয়ে বাসার দিকে ছুটলাম।
-মনিপুরিপাড়া থেকে তো বসিলা অনেকটা দূরে। তাহলে
ওখানে গেলেন কেন?
-সেপ্টেম্বর মাস। তখনও কাশফুল আছে, আমি হাউজিং এর ভেতরে
গাড়ি নিয়ে গেলে কেউ খুব একটা লক্ষ্য করবে না তাই।
-গাড়িটা আপনার নিজস্ব ছিল?
-না, “রিয়াদ কার রেন্ট” থেকে রেন্টে নিয়েছিলাম।
কেবিনটা চুপচাপ
হয়ে গেল। গেদে-দর্শনা বর্ডার পার হয়েছে অনেকক্ষণ। ট্রেনে সিগারেটটা
জ্বালাবে কিভাবে? নাহ থাক।
হঠাৎ লেখকঃ আচ্ছা একটা কথা বলুন, আপনি “জলি দোহা”র খবর
কোথায় পেলেন? আপনি তো আর Professional killer না।
সুবোধঃ আমার একজন বন্ধু আছে, প্রিয়াঙ্কা। কলেজে একসাথে
পড়েছি। ও ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে পড়ালেখা করেছে। স্বভাবতই সে দুঃখের দিনে আমার
খোঁজ নিয়েছিল। পুলিশের এই গা ছাড়া ভাব দেখে, আমি ওর শরণাপন্ন হই। যদিও ও জানত না,
আমি খুন করার মোটিভ নিয়েই ওদের খুজে বেড়াচ্ছি।
লেখকঃ কি কি জানলেন?
সুবোধঃ আবির নিজেই ভীত ছিল, তাই সাথে ভাড়া করা খুনি জলি
আর তার সহযোগী সিজারকে নিয়ে এসেছিল। বাসায় ঢোকার আগে ওরা আমার সিসি ক্যামেরার
রেঞ্জের বাহিরে থেকে ওটাকে উড়িয়ে দেয়। আমি আর প্রিয়াঙ্কা আসে পাশে যত সিসি টিভি
ফুটেজ আছে জোগাড় করি। কিছু পুলিশের কাছেও ছিল। আমি ভেবেছি, একসাথে ৩জন দেখতে পেলেই
সেটাকে মার্ক করবো। কিন্তু প্রিয়া বলল, যেখানে ২জন একসাথে দেখবি সেটাকে মার্ক
করবি।
লেখকঃ কেন কেন?
- বলছি। এটা প্রথমে আমার মাথায়ও আসেনি। প্রথমে আলাদা করলাম ৫টা
পেয়ারকে। তারপর এদের মধ্যে যারা মোবাইলে কথা বলছে এমন ২টা পেয়ারকে আলাদা করলাম।
হতে পারে এরা, আবিরের সাথে ফোনে কানেক্টেট ছিল। এটা প্রোফেশনাল কিলারদের একটা
ট্রিক। এর পরের ঘটনা আমি জানি না। ৫ কি ৭দিন ঠিক খেয়াল নেই, প্রিয়া জানালো কে কে জড়িত ছিল ওই
খুনে। আমিও লেগে পড়লাম ওদের খুজতে।
-খুনি তো অন্য কেউও হতে পারতো। আপনি যদি ভুল লোককে মেরে
থাকেন?
-ভুল হতে পারত যদি আনাড়ি কাউকে কাজটা দিতাম। এখানে
সন্দেহের অবকাশ নেই। তবুও আমি sure হয়ে নেইনি এটা আপনাকে কে বলল? আমি কিলার ভাড়া
করার নাম করে, মগবাজার এলাকায় এক দালালের সাথে দেখা করলাম। এদের হরহামেশা
ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
-সেকি?
-তাহলেই ভাবুন? আমাদের পুলিশের কি করুন অবস্থা। এসব দালালরা বুক
ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এর সাথে দেখা করলাম, কথা হল সে কিলারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু
কেমন মার্ডার করতে হবে তার ওপর নির্ভর করবে টাকার পরিমান। টাকা দালালের সাথেই ঠিক
করতে হবে। কিন্তু আমি ছিলাম নারাজ আমি বলেছিলাম, কিলার না দেখে আমি ডিল করব না।
আমি ভেবেছিলাম, সে দেখা করতে দেবে না। সে আমাকে বাইতুল মোকারমের পেছনের গেটে যেতে
বলল। আমরা তখন কাকরাইল পার হয়ে পল্টনের রোডে। বাইতুল মোকারমের পেছনের গেটে যেতেই
দালাল গাড়িটা সাইডে রাখতে বলল। কিছুক্ষনের জন্য বাহিরে গেল, ফিরে এসে একজন লোককে
সাথে দিয়ে বলল, একে নিয়ে যান ওই আপনাকে দেখিয়ে দেবে। যাকে গাড়িতে তুললাম, তার
একহাত কাটা। জিজ্ঞেস করলাম, কি করেন ভাই আপনি? উত্তর: মসজিদের পেছনের গেটে ভিক্ষা
করি।
-ভিক্ষুক? সে কিনা আপনাকে কিলারের কাছে নিয়ে গেল?
-হ্যাঁ। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছি। কিন্তু আমাকে জলি
পর্যন্ত যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বাহিরের দিকে কিছু ইলেকট্রিক্যালের দোকান
আছে, ভার্সিটিতে পড়ার সময় অনেকবার গিয়েছি প্রোজেক্টের জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু
সেদিন গেলাম খুনি কিনতে। ভিক্ষুকটাকে ১০০টাকা দিইয়ে বিদায় দিলাম। তার দেখিয়ে দেয়া
দোকানে যেয়ে বললাম, “১২ভোল্টের ব্যাটারি হবে, মগবাজার নেবো?” উত্তর: জ্বী ভাই হবে
৫মিনিট দাড়ান।
-“১২ভোল্টের ব্যাটারি হবে, মগবাজার নেবো?” এটা কি ছিল?
-এটা ছিল কোড নাম্বার। কিছুক্ষন পর সে বলল, কোথায় বসে
কথা বলবেন? আমি বললাম, এখানে, কোন সমস্যা? সে দোকানের লাইট জ্বালিয়ে সাটার নামিয়ে
দিল।
[কথোপোকথন]
খুনিঃ বলুন।
সুবোধঃ আমি যাকে মারতে পাঠাবো তাকে মেরে আসা খুব সহজ কাজ
না। তাই আমার জানা দরকার আপনি আগে কাউকে মেরেছেন কিনা?
খুনিঃ অনেকগুলো বড় ডিল আমি করেছি। দেশের বাহিরের সুপারিও
নিয়েছি।
সুবোধঃ পুলিশের কাছে ধরা খেলে কি হবে আমার নাম কোন দিনও
সামনে আসতে পারবে না।
খুনিঃ কার সামনে আসবে পুলিশের? পুলিশ আমার ালও ছিড়তে
পারবে না।
সুবোধঃ আবির নামে কাউকে চেনেন?
ধুপ করে খেপে গিয়ে, পেছন থেকে একটা দেশি পিস্তল বের করল
কিলার।
খুনিঃ ওই তুই পুলিশের লোক? শুয়ারের বাচ্চা তুই পুলিশের
লোক। (দাত কিটমিট করে বলতে থাকল) মহারাজ(দালালের নাম) বেইমানের বাচ্চা ওরে বারবার বলছি চেক করে নিবি।
সুবোধঃ আরে ভাই শান্ত হন। আমি পুলিশের লোক হতে যাবো কেন।
আবির আর আমি একসাথে পড়ালেখা করেছি, ও মারা যাবার আগে আপনাকে একটা ডিল দিয়েছিল সেটা
আমি জানতাম।
খুনিঃ (আমার কনফিডেন্স দেখে বাস্টার্ডটা বিশ্বাস করল) আচ্ছা,
আবির সাহেব ভাল ছিল কাজের আগেই পুরা টাকা দিয়ে দিছিল, দুইটা মহিলারে মারছিলাম। পরে
একটা মনে হয় পুরা মরে নাই। বলেন, কাকে আর কবে কাজ করতে হবে?
সুবোধঃ ২২শে সেপ্টেম্বর, কাজী বিরিয়ানিতে থাকবেন, আমি
এসে নিয়ে যাবো। একটা কলেজের প্রিন্সিপালকে মারতে হবে, বাসায় ঢুকে। এবার কাচা কাজ
করলে চলবে না।
[শেষ]
যমুনা ব্রিজ পার হল ট্রেন।
লেখকঃ অস্ত্র পেলেন কোথায়?
সুবোধঃ কিনেছিলাম।
লেখকঃ লাইসেন্স করা?
-দেশে সব কিছু কি লাইসেন্স করে হয়? ১টা সাউন্ড গ্রেনেড
আর ৪০রাউন্ড গুলি সব ছিল illegal, এভাবে অস্ত্র কেনা খুব কঠিন কাজ নয়।
-একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না।
-মনে করার হলে করব। সেটা আপনি বললেও আটকাতে পারব না। তবে
বলতে পারেন।
-আপনার কাছে মনে হয়নি, নিরাপরাধ মানুষগুলো আমি কেন
মারছি?
-এতটা ভাববার সময় নেই । আর আপনি জানেন টাকার ওপরই নির্ভর
কর মানুষের জীবনের মূল্য।
-এটা আপনার ধারণা, এটা সত্য নয়।
-তাই নাকি? তাহলে বলুন তো সোমালিয়ানরা কেন আমাদের দেশে
এসে থাকছে?
-ওটার সাথে এটার কি সম্পর্ক?
-একজন আমেরিকানের জীবনের মূল্য বেশি নাকি একজন
সোমালিয়ানের?
-জীবন অমূল্য।
-বাদ দিন, আপনার সাথে তর্ক করে লাভ নেই।
-হ্যাঁ। আপনার বাকি কাহিনী শুনি, সেটাই উত্তম।
-২২তারিখ সবটা ঘটনা ঘটার পর। রাতে বাসায় বসে ভাবছিলাম,
কি করা যায়? একবার ভাবলাম ভারতে গিয়ে কিছুদিন লুকিয়ে থাকি। সিলেট হয়ে বেরিয়ে,
আসাম থেকে দিল্লি যাব। কিন্তু খবরে যা
শুনেছি তাতে ভাল লাগার কিছু ছিল না। পুরো বিষয়টাকে সরকার জঙ্গীবাদ বলে চালিয়ে দিল।
তাই পালিয়ে যাওয়াটা ভুল হবে। ভিসা লাগানোই আছে। সেদিন রাতটা অনেক শান্তিতে কেটেছিল
আমার। আমি সুমনার কানে কানে এসে বলেছিলাম, আমি বাকি ২টো দোষীকেও শাস্তি দিয়ে
দিয়েছি। হয়ত এটা শুনবার জন্যই সে এতটা দিন বেঁচে ছিল। ৩দিন পর আমি দিল্লি চলে
এলাম। দিল্লি থেকে মুম্বাই, তারপর কোলকাতা। ঘুরে ঘুরে ভাল লাগছে না। একটু দেশের
হাওয়া খেতে চাই। তাই আজ ফিরে যাচ্ছি।
-একটু বাহিরে যাবেন? একটা সিগারেট খাবো।
-হুম ঠিক আছে।
লেখক পকেট থেকে পার্লামেন্টটা বের করে ধরালো । এমন একটা
কাল্প্রিটের সাথে এতটা সময় কথা বলেছে সে। খুব সহজ ভাবে নেবার ছিল না। সিগারেটটা
শেষ হতে না হতেই, সুবোধ কামরায় ঢুকল। ৩০মি. মধ্যেই ক্যান্টনমেন্টের স্টেশনে ট্রেন
ঢুকবে।
লেখকঃ একটা মিথ্যে বলেছি আপনাকে, আমি লেখক নই। আমি
পুলিশ। আমার নাম, কমলেশ ঘোষ।
সুবোধঃ আমি জানি। সুমনা আর বেঁচে নেই। আমার কাজও শেষ তাই
মরার ভয়টা আর কাজ করছে না।
-আপনার একটা রেপুটেশন আছে। একটা অফার দেই।
-বলুন।
- শুনশান কোথাও চলুন যেখানে আপনাকে খালাস করে আসা যাবে। এমনি কেউ
মেরে ফেলেছে বলে চালিয়ে দেবো। নইলে জেলে ঢুকালে আপনাকে জঙ্গী আখ্যা দেয়া হবে। এর
চেয়ে ভালো পুলিশ জঙ্গী খুঁজুক। আপনার সম্মানটাও বেঁচে যাক।
-অফারটা ভালো বলেছেন। শুনে খুশি হলাম।
-এটা বলুন তো আপনি সব কেন বললেন আমাকে?
-আমার আর পালাতে ইচ্ছে করছে না তাই।
- কিন্তু বুঝলেন কিভাবে আমি পুলিশ?
-৪টি বিষয়; ১. আপনার ব্যাগে কৃষ্ণের মুর্তিবিশিষ্ট রিং
আছে, তার মানে আপনি মুসলিম না।
২. কিলারের
নাম জলি, আপনি এটা জানলেন কিভাবে?
৩.
আমার বাসা মনিপুরিপাড়া সেটা আপনাকে একবারও বলি নিই, আপনি তাও জানেন।
৪.
আপনি রেদুয়ান হোসেন কাজল না।
আপনি যদি রেদুয়ান হোসেন কাজল হয়ে থাকেন তাহলে আমি
কে?
Comments
Post a Comment